নাম্বার প্লেট ছাড়া অনটেষ্ট মোটর সাইকেল আটকের সরকারি নির্দেশে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার মডেল বাণিজ্য এখন তুঙ্গে। আর থানার অফিসার ইনচার্জ্জ (ওসি) আব্দুল মালেক এই মডেল বাণিজ্যের অভিনব কৌশল আবিস্কারক। কারণ তিনি স্ক্রিপ্ট ছাড়াই ভাল নাটক করতে পারেন। তার নির্দেশে শহরের অনটেষ্ট মোটর সাইকেল আটক করেন থানার দারোগা বাবুরা আর থানায় বিকল্প আদালত বসিয়ে দেন-দরবার আর দর কষাকষি করে এসপি’র নাম ভাঙিয়ে ওসি করেন মোটা দাগের উৎকোচ বাণিজ্য। এভাবেই সদর থানায় নিত্যদিন চলছে ওসি’র অনটেষ্ট মডেল বাণিজ্য। সদর পুলিশের এমন মডেল বাণিজ্যে ওসি মালেকের পোয়াবারো আর দিশেহারা এখন শহরের মোটর সাইকেল আরোহীরা। এমনই মন্তব্য এখন শহরের মোটর সাইকেল মালিকদের। সূত্রমতে, অনটেষ্ট মোটর সাইকেল ধরা আর ছাড়া এখন ওসি মালেকের অন্যতম প্রধাণ বাণিজ্য। তাছাড়া মাদকতো আছেই। এটা তার পুরনো ব্যবসা। ভুক্তভোগীদের মতে কাগজ পত্রের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন জমা থাকা সত্বেও দারোগা বাবু ধরবেন আর ওসি মালেককে নজরানা দিতে বাধ্য থাকবেন। এটা যেন এখন সদর থানার ওসি’র অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। আবার কখনও কখনও একই গাড়ি ২/৩ বার পুলিশের হাতে আটক হয়ে থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে ডাক্তারদের ভিজিটের মত ১ম বারের চেয়ে ২য় বার ওসি’র চার্জ্জ কম নয় বরং হয় উল্টো। অর্থাৎ ২য় বার ধরলে চার্জ্জ একটু বেশীই দিতে হয়। এভাবে সপ্তাহে তিনি ১০/১৫ টি মোটর সাইকেল তার দারোগাদের দিয়ে ধরে আনেন এবং তার বিকল্প আদালতের রায়ে দর কষিয়ে পকেট ভরে আবার ছেড়ে দেন। ওসি’র এই অনটেষ্ট মডেল বাণিজ্য নিয়ে শহরের সর্বত্র এখন বইছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের নানা শ্রেণী পেশার মানুষের মন্তব্য বিভিন্ন রকম। তারা বলেন, ওসি মালেক ভদ্রতার মুখোশ পড়া নষ্ট মনের এক প্রতিচ্ছবি। তাছাড়া তিনি ঝোপ বুঝে কোপ মারেন। লোক চিনে বাণিজ্যের আলাপ করেন, অন্যথায় বলেন এটা আমার এসপি’র নির্দেশ। সময় মত আবার শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপকৌশলেও লিপ্ত হন।
অনটেষ্ট মডেল বাণিজ্যে ওসি মালেকের বৈশিষ্ট্য
ওসি মালেকের এই অভিনব বাণিজ্যের কৌশল বর্ণনা দিতে গিয়ে সদর থানা পুলিশের একটি ঘনিষ্ট সূত্র জানান, ওসি মালেক “চিজ বড়া হ্যায় মস্ত মস্ত” তার মডেল বাণিজ্যের কায়দাটা হল দারোগারা ডিউটিতে বের হয়ে ওসি’র নির্দেশে আগে একটা মটর সাইকেল খোজে, যার নাম্বার প্লেট নাই এবং অনটেষ্ট লেখা। ঐ মটর সাইকেলটা আটক করে সরাসরি থানায় নিয়ে আসে এবং চালককে বলে দেয় বড় বাবুর (ওসি মালেক) সাথে দেখা করার কথা। আর ওসি মালেক কায়দা করে ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখেন চালককে। এর মধ্যে তিনি অপেক্ষায় থাকেন ঐ মটর সাইকেলের জন্য কোন নেতা বা পয়সাওয়ালা পার্টি তার (ওসি) মোবাইলে ফোন দেয় কিনা। ফোন আসলে তো দুই ছক্কা পাঁচ, মানে ধান্ধা খাড়া। কিন্তু যদি ওসির মোবাইলে ফোন না আসে বা চালক কোন কমদামি পার্টি নিয়ে আসেন তাহলে দেখা যায় ওসি আব্দুল মালেকের ভ্রদ্রতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা বদমেজাজি অপ্রত্যাশিত চরিত্র। তার চরম উত্তেজনা ও অসদাচরণ দেখলে এক ভীন্ন মালেককে আবিস্কার করা যায়। তখন তিনি তার উপরস্থ কর্মকর্তাদের নাম বিক্রি করে দূরদুর করে থানা থেকে ঐ মটর সাইকেলের মালিককে তাড়িয়ে দেন এবং বলে দেন ছাড়া যাবেনা এই মটর সাইকেল রিপোর্ট হয়ে গেছে,এসপি’র নলেজে আছে, এসপি’র নির্দেশে ধরা হয়েছে, আবার তিনি বললেই ছাড়া হবে। আবার নগদ টাকা দিলে তখন আর এসপি’র সাথে কথা না বলেই ছেড়ে দেন। এটাই তার বৈশিষ্ট্য।
ওসি মালেকের দম্ভোক্তি
সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল মালেকের কাছে কেউ কোন তদবীর নিয়ে গেলে প্রথমেই তিনি একটা ডায়লগে দম্ভোক্তি দেখান“ বুক ফুলিয়ে গর্ব করে বলেন “আমি সেই ওসি এই থানায় এসে সবার আগে আমি আমার দারোগাদের নামে জিডি করেছি” আসলে এইটা হল ওসির ধান্ধা করার এক অভিনব কায়দা। এতে করে তিনি তদবীরকারীদের বোঝাতে চান তার ডিমান্ট বেশি। অবশেষে হয় দরদাম, নগদ লেনদেনে হয় মটর সাইকেল ফেরৎ, আবার তদবীরকারিকে বলেন, শুধু আপনার দিকে তাকিয়ে ছাড়লাম। ওসি মালেকের উল্লেখিত সব বৈশিষ্ট্যের উদাহরণ দিতে সূত্রটি জানান, গত ২৬/১০/২০১৫ ইং তারিখ সোমবার সকালে শহরের ডি.আই.টি এলাকা থেকে সদর মডেল থানার মডেল দারোগা এস আই হামিদ একটা সিঙ্গার মটর সাইকেল ধরে থানায় নিয়ে আসেন। মটর সাইকেলের মালিক হামিদের সাথে যোগাযোগ করলে হামিদ বলে আমার কিছু করার নাই আপনে ওসির সাথে কথা বলেন, দুপুর ১২টা থেকে চালকসহ কয়েক জন থানায় আসলেও ওসির দেখা মিলে নাই, সারা দিন থানায় বসে থাকতে দেখা যায় ঐ মটর সাইকেল মালিক সহ আরো কয়েক জন কে। দিন পেরিয়ে সন্ধ্যায় দেখা মেলে ওসি মালেকের, এ ব্যাপারে ওসি মালেকের সাথে কথা বলতে গেলে ওসির হিসেবে না মেলায় মোটর সাইকেলের মালিককে এসপি’র দোহাই দিয়ে বিদায় করে দেন। সাথে তার জীবনের সেই কৃতিত্বের কথাটাও বলে দেন যে আমি আমার পুলিশের বিরুদ্ধে এই সদর থানায় জিডি করেছি। সেই ব্যক্তি নিরাশ হয়ে চলে যান। তবে রাত ১০ টায় ২য় তদবীরে নগদ টাকায় হয় রফাদফা। মাত্র অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে ঐ মোটর সাইকেল মালিককে ফেরৎ দেওয়া হয়। এভাবে এসপির দোহাই দিয়ে অনটেষ্ট মডেল বাণিজ্য করলেন ওসি মালেক। এতে করে লাইসেন্স ছাড়াই বৈধ হয়ে গেল মোটর সাইকেল। অর্থাৎ ওসি মালেককে টাকা দিলেই অবৈধ সব কিছু বৈধ হয়ে যায়। এ নিয়ে সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল মালেকের সাথে যোগাযোগ করলে টাইমস্ নারায়ণগঞ্জকে তিনি জানান, মোটর সাইকেলটি তিনি ছাড়েননি। ধরেছেন এস আই হামিদ ছেড়েছেন তিনিই। আমি এর কিছুই জানিনা। তবে যার মোটর সাইকেল তিনি সংশ্লিষ্ট দফতরে দরখাস্ত করে এসে মোটর সাইকেল নিয়ে গেছে। ওসি মালেকের অনটেষ্ট মোটর সাইকেলের এই ধরা ছাড়ার বানিজ্য সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার ড. মুহিত উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করলে টাইমস নারায়ণগঞ্জকে তিনি জানান, ছেড়ে দেয়ার তো কারণ নাই। যেটা আইন সঙ্গতভাবে আটক হয় সেটা ক্রোকের মাধ্যমে ফেরৎ পাবে এটাই হচ্ছে পদ্ধতি। কেউ যদি টাকা পয়সার বিনিময়ে ফেরৎ নিয়ে থাকে তবে তাকে লিখিত অভিযোগ করতে বলেন, আমি ব্যবস্থা নেব। এদিকে মোটর সাইকেলের মালিকের সাথে কথা বললে তিনি জানান যা দিছিতো দিছি, মোটর সাইকেলতো ফেরৎ পাইছি, এসব নিয়া কিছু লেখার দরকার নাই। কথায় আছে পুলিশে ছঁইুলে আঠারো ঘাঁ। এসব নিয়া লেখালেখি করবেন, দেখা যাইবো পুলিশ আবার আমার পিছে লাগব। পুলিশ টাকা খায়,খাইতাছে আর খাইব, এই অনিয়মটাইতো এখন নিয়ম হইয়া গেছে। অতএব এসব লিখে কী করবেন?
0 comments :
Post a Comment