সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি
নৌ-পথে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য এমরানকে (২২) গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১ বাহিনীর একটি অভিযানিক দল। এ পাচারকারী চক্রের খপ্পড়ে পরা ৬৪০ জনের মধ্যে আড়াইহাজার থানা এলাকার ইয়াছিন (১৮) নামে এক যুবক জাহাজে ২৮ দিন সমুদ্রে থেকে দেশে ফিরে এসে মামলা দায়ের করলে সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটায় নরসিংদী জেলা সদর থানার খাদিমারচর এলাকা থেকে র্যাব তাকে গ্রেফতার করে। তবে মূল হোতা হামিদ পলাতক রয়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে অবস্থিত র্যাব-১১ বাহিনীর সদর দপ্তরে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলনে র্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন তালুকদার জানান, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর ৭/৮ ধারায় ঢাকার বিমানবন্দর (ডিএমপি) থানায় দায়ের করা মামলায় এমরানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃত এমরান সঙ্গবদ্ধ মানব পাচারকারী দলের সক্রিয় সদস্য।
আড়াইহাজার থানার কল্যাণদী উত্তর পাড়া গ্রামের মোঃ ইসমাইল হোসেনের ছেলে মামলার বাদী ইয়াছিন সাংবাদিক সম্মেলনে জানায়, আমিসহ ৫ জনকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা করে মৌখিক চুক্তিতে মালয়েশিয়া পাঠানোর নাম করে গত ৪ এপ্রিল মাইক্রোবাসযোগে চট্টগ্রাম নিয়ে যায় নরসিংদী জেলা সদর থানার খাদিমারচর গ্রামের মৃত মোস্তফার ছেলে এমরান।পরে সেখান থেকে সিএনজি দিয়ে পাহাড়ী রাস্তার ভিতর দিয়ে বাঁশখালী থানা এলাকার নির্জন স্থানে আটকিয়ে রাখে। এর পর ৭ এপ্রিল তাদেরকে ট্রলার দিয়ে মায়ানমারে নিয়ে পাচারকারী চক্রের মূল হোতা হামিদের কাছে বুঝিয়ে দেয় এমরান। সেখান থেকে হামিদ চক্র মোট ৪৪০ জনকে শীপ দিয়ে নিয়ে যায় ইন্দোনেশিয়া সীমান্ত এলাকার একটি দ্বীপে। সেখানে নেওয়ার পর আরো ২০০ জনসহ মোট ৬৪০ জনকে মালয়েশিয়ায় পাচার করার জন্য বড় একটি জাহাজে উঠায়। কিন্তু সে দেশের নৌ-বাহিনীর তৎপরতায় পাচারকারী চক্রটি সাগরে জাহাজ পেলে স্পিড বোর্ড দিয়ে পালিয়ে যায় মালয়েশিয়ায়। পরে ওই ৬৪০ জনের মধ্যে মায়ানমারের নাগরিক হোসাইন নামে একজন জাহাজটি চালিয়ে তীরের দিকে আসে। তারা সবাই স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ওই দেশের একটি পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে উপস্থিত হয়। এর পর ওই কেন্দ্র থেকে যার যার দেশে ফিরত পাঠানোর ব্যাবস্থা করা হয়। পুলিশী ব্যাবস্থায় দেশে ফিরে এসে ইয়াছিন বাদী হয়ে পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে গত ১২ জুন বিমানবন্দর থানা মামলা দায়ের করে। যার নং ২৪। ইয়াছিন আরো জানায়, তাদেরকে ট্রলার, জাহাজ ও বন জঙ্গলদিয়ে পায়ে হেটেও পথ পারি দিতে হয়েছে। পাচারকারীরা দৈনিক দু‘বেলা খাবার দিতো। মারধরও করতো।
র্যাব জানায়, মামলা দায়ের করার পর থেকেই এমরান আতœগোপন করে। গোয়েন্দা নজরধারী অব্যাহত রেখে অবস্থান নিশ্চিত হয়ে গত সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। তবে এমরার হামিদের সহযোগী হিসেবে কাজ করতো। মূল হোতা হামিদও নরসিংদী জেলা শহরের বাসিন্দা। সে বর্তামানে মালয়েশিয়াতে আতœগোপনে আছে। জাহাজ থেকে উদ্ধার হওয়ার লোকজনের মধ্যে অনেকই এখনো দেশে ফিরে আসেনি। সরকার তাদের ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্বক চেষ্টা করছে। এ পাচারকারী চক্রটি গ্রেফতার করার জন্য র্যাব-১১ বাহিনীর জোর তৎপরতা আব্যাহত রয়েছে বলে জানান অভিযানের নেতৃত্বদানকারী এএসপি মোহাম্মদ সালাউদ্দিন তালুকদার।

0 comments :
Post a Comment