যদি সুদর্শন না হতো আমি কখনই অক্ষয়কে বিয়ে করতাম না।


যদি সুদর্শন না হতো আমি কখনই অক্ষয়কে বিয়ে করতাম না।
টুইঙ্কল খান্না খুব বেশিদিন সিনেমায় অভিনয় করেননি। বলা যায় ঝলসে ওঠার আগেই অক্ষয় কুমারকে বিয়ে করে অন্তরালে চলে যান। তখন অনেকেই জানতেন না বলিউডের স্মরণীয় জুটি রাজেশ খান্না-ডিম্পল কাপাডিয়ার বড় মেয়ে এত ভাল লিখতে পারেন। কিন্তু তার প্রথম বই বেরোতেই হৈচৈ চারিদিকে।
সম্প্রতি কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার হয়ে টুইঙ্কল খান্নার সঙ্গে কথা বলেন নাসরিন খান। সে আলাপচারিতা পাঠকেদের জন্য তুলে ধরা হল—
মাসখানেক আগে প্রকাশ হওয়া বই ‘মিসেস ফানিবোনস’ তো ঝড় তুলে দিয়েছে।
না না, আমি ঝড়-টড় তুলিনি। এটা তেমন কিছু ব্যাপারই নয়। তবে বইটা যে মানুষের ভাল লেগেছে তার জন্য আমি আনন্দিত। এত ভাল বিক্রি হবে ভাবতেও পারিনি। আমার মনে হয়েছিল মাঝারি ধরনের ভাল চলবে বইটা।
যারা আপনার বই বা ব্লগ পড়েননি তাদের জন্য বলে রাখছি আপনার লেখা তো ব্যঙ্গাত্মক, হাসির। শুরুতেই এই ধরনের লেখা কেন?
আমি সেই সাংবাদিকের কাছে কৃতজ্ঞ যিনি তার কাগজে একটা সেলিব্রিটি কলামে আমার লেখা নিতে শুরু করেন। ওই কলামের জন্য লিখতে গিয়ে লেখার চর্চা শুরু হয়েছিল। 
আগে কখনো লেখালেখি করেছেন?
কৈশোর থেকেই লেখালেখি শুরু। মৃত্যু, বিষাদ— এ সব নিয়ে কবিতা লিখতাম। ২৩টা লিমেরিক লিখে ফেলেছিলাম। একটা উপন্যাসও অর্ধেক লিখেছিলাম। ষোলো বছর বয়সী এক মেয়ের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা হয়েছিল। তার পর কুড়ি বছর একটা শব্দও লিখিনি। এখন সেই একই লেখা লিখছি কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গিটা এখন এক নারীর।
লোকে বলে তীব্র সেন্স অব হিউমার পেয়েছেন আপনার মা ডিম্পল কাপাডিয়ার থেকে। সত্যি?
না। (খানিকটা ভেবে) আমার এই স্বভাবের পুরো কৃতিত্বই দেব আমার দাদা-দাদীকে। আমার তো মনে হয় মা আমাকে নকল করেন। বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে এমন সব কথা বলছিলেন সেদিন যে আমি ওকে ঠ্যালা মেরে চুপ করাতে বাধ্য হয়েছিলাম। অনুষ্ঠানের পর একটা পার্টিতে যেতে যেতে মা বলেছিলেন, ‘বই বেরোনো মানে এই নয় যে এখন কেবল নিজের বই নিয়ে কথা বলবে।’ কিন্তু নিজেই আমার বই নিয়ে কথা বলা থামাচ্ছিলেন না (জোরে হেসে ওঠেন টুইঙ্কল)। 
অক্ষয় কুমার সম্প্রতি বলেছেন তিনি জীবনে একটাই বই পড়েছেন আর সেটা ‘মিসেস ফানিবোনস’...
সেটা ঠিক। আমি হলাম ওর জীবনের সালমান রুশদি। যেহেতু ও বইটই পড়ে না, তাই আমার লেখা পড়ে আমাকেই জিনিয়াস লেখক ঠাওরেছে।
অক্ষয় আপনাকে এই বইয়ের অনেকটা এডিট করতে বলেন। এটা কি সত্যি?
সেটা সত্যি। আমার শেষ লেখাটা ও এডিট করতে চায়নি। বরঞ্চ ও আমাকে অন্য লেখাগুলো আরব সাগরের পানিতে ছুড়ে ফেলে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু নতুন করে লেখালেখির সময় ছিল না। আমি যেমনটা লিখেছিলাম তেমনটাই ছাপা হয়।
টুইটার, ফেসবুকে কেউ আপনার পেছনে লাগে না। কীভাবে সকলের মন জুগিয়ে চলেন?
আমাকেও কেউ রেয়াত করত না। আমারও পেছনে লাগা হতো। পেছনে লাগার মধ্যে ইন্ডাস্ট্রির রাজনৈতিক গন্ধ থাকে। ইদানীং লক্ষ্য করছি ওরা আমাকে ছেড়েই দিয়েছে। হয়তো আমার মধ্যে তেমন কটাক্ষ করার খোরাক কিছু পাচ্ছে না। 
অনলাইনে এই গালাগালির ব্যাপারটা নিয়ে অনেক সেলিব্রিটিই ঝামেলায় পড়েছেন। ভয় লাগে নিশ্চয়ই?
না, একেবারেই না। এতে করে এই লোকগুলোর মনের বিষগুলোই বেরিয়ে আসে। আমি একদম তাদের পছন্দ করি না যারা অন্যের প্রোফাইলে গিয়ে অবাঞ্ছিত কমেন্ট করে। আমি আমার পোস্টে যে সব কমেন্ট পাই সেগুলো পড়ি। সেখান থেকেই ফিডব্যাক নিই। নজর রাখি আমি নিজে সীমা অতিক্রম করছি কি-না।
নিজস্ব একটা পরিচিতি গড়ে তোলার পর বাবা রাজেশ খান্নাকে মিস করেন?
(খানিকক্ষণ চুপ) এটা একটা সেন্টিমেন্টাল ব্যাপার। কোনো কথা বলতে চাই না। খুবই ব্যক্তিগত... হ্যাঁ, তাকে মিস করি। চিরকাল করব।
আচ্ছা মিসেস ফানিবোনসের হাসি পায় কিসে?
সারাজীবন ধরেই আমি নানা মজার কথা বলেছি। লোকে তা শুনে হেসেছে। সবাইকে আমি যে হাসাতে পারি সেটা আমার জীবনের অন্যতম বড় সাফল্য। আসল কথা আমি নিজেকে হাসিখুশি রাখতে চাই বলে সব সময় হাসির কথা বলে থাকি।
আজকের মানুষ দেখনদারির ওপরেই জোর দেয়। সেখানে চেহারা না দেখে আপনার রসিকতা ও সংবেদনশীলতা যখন লোকে মন দিয়ে দেখে তখন কেমন লাগে?
দারুণ লাগে। কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গিটা খুব খাটো। একজন কেউ দারুণ দেখতে বা খুব বুদ্ধিমান— এই ভাবে কেন বিচার করা হবে? মানুষের মধ্যে দুটি গুণই তো থাকতে পারে। 
আপনি কি প্রথম থেকেই এই রকম?
আমার বেড়ে ওঠার বয়স থেকেই আমি এই রকম। বুঝেছি যদি জনপ্রিয় হয়ে থাকার চেষ্টা করি তাহলে আমার যে রসবোধ আছে সেটা মানুষকে দেখাতে পারব না। যারা ‘অড’ তারাই ‘ইউনিক’। তারাই পারে জীবনটাকে অন্যভাবে উপভোগ করতে।
এই যে খোলা বইয়ের মতো হয়ে যাওয়া, এতে কি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে?
আমি খোলা বই নই। যদিও কিছুটা খোলা বইয়ের মতোই, তবে পুরোটা নয়। সকলে শুধু ততটাই জানতে পারে যতটা জানাতে চাই। কেউ কি জানে আমি ধার্মিক না নাস্তিক? জানে কি আমার জীবনের বাকি দিকগুলো? বাইরের লোকেরা আমার সম্পর্কে যা জানে তা একটা ধারণা মাত্র।
কোথা থেকে এত শক্তি পান?
আমি আমার মনোবিদের কাছে যাই। (মজা করে বলেন) সত্যিই জানি না কী বলা উচিত।
গ্ল্যামার, পয়সা সবকিছুর মধ্যে মানুষ হয়েও এত বাস্তববাদী কী করে হলেন?
যা হয়েছে সবটাই আমার মায়ের জন্য। মায়ের জন্যই এতটা বাস্তববাদী হয়েছি। আমরা বোর্ডিং স্কুলে পড়তে গিয়েছিলাম। সেটাও আমাদের খুব বাস্তববাদী হতে সাহায্য করেছে। আমরা কোনোদিন সিনেমাটাকে বিশেষ নজরে দেখিনি। এটা আর পাঁচটা কাজের মতোই একটা কাজ।
লাখ লাখ ফ্যান থাকা সত্ত্বেও লাইমলাইট থেকে দূরে সরে যাওয়াটা ঠিক কেমন ছিল?
সহজ ছিল। কারণ আমি যা হতে চেয়েছি তাই হয়েছি। অভিনেত্রী ছাড়া আর সবই হতে চেয়েছি। সুযোগ এসে যাওয়ার পর আমি যা করার তাই করেছি। সিনেমাও করেছি। কিন্তু ফিল্ম আমাকে টানে না। নিজের কোনো ছবি কখনো দেখি না। এমনকি আমার মা-ও আমার ছবি দেখেননি। নাগালের মধ্যে যা পাওয়া যায় সেটা আমি পেতে ইচ্ছুক নই। আমার কাছে আনামী কেউ হয়ে ওঠাটাই অনেক বেশি আকর্ষণীয়।
অনেকের চোখেই রাজেশ খান্না হলেন সত্যিকারের সুপারস্টার। কীভাবে মনে রাখতে চান আপনার বাবাকে?
উনি আমার বাবা। বাবা কী ছিলেন, কী করতেন এই সব বাদ দিয়ে একজন মেয়ে যে ভাবে তার বাবাকে মনে রাখতে চায় আমিও সে ভাবেই মনে রাখব।
উঠতি বয়সে তারকা মা-বাবার সন্তান হওয়াটা কতটা চাপের ছিল?
এটা মোটেই চাপের ব্যাপার নয়। আমাদের প্রত্যেককেই জীবনে মানিয়ে নিতে হয়। আমাদের বাবা-মা তারকা হলেও শিক্ষকরা মোটেও আমাদের বিশেষ চোখে দেখেননি। সেই কারণেই আমাদের বোর্ডিংয়ে পাঠানো হয়েছিল। আমিও অন্যদের মতোই এক মা। অক্ষয় আর পাঁচজনের মতোই এক বাবা। আমরা একটা সাধারণ, স্বাভাবিক পরিবার। লোকে আমাদের অন্যরকম ভাবতে পারে, কিন্তু আমরা আমাদের মতোই। আসল কথা স্টারডমকে সিরিয়াসলি নিলেই যত সমস্যা। এটা একটা ফাঁদ।
জীবনে সব থেকে মূল্যবান শিক্ষা কী পেয়েছেন?
জীবন মানেই শিখে চলা আর বেড়ে ওঠা এবং হাসতে হাসতে এগিয়ে যাওয়া। জীবনের যাত্রা উপভোগ করেছি। সব মায়েদের আমি বলি- বাচ্চাদের ‘পারফেক্ট’ করে গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন না। তাদের ফাঁকগুলো, দোষত্রুটিগুলো আপন করে নিন। আমি বুঝেছি আমার দোষত্রুটি আর ফাঁকগুলোই আজকের আমাকে তৈরি করেছে। আমার অতিরিক্ত ওজন আর চাঁচাছোলা কথা বলার অভ্যাসই আমাকে ‘ইউনিক’ করে তুলেছে। তাই বার বার বলি- নিজের বাচ্চার সব রকম ‘ইউনিকনেস’ আপন করে নিন সাদরে।
সুদর্শন স্বামীকে নিয়ে সংসার করা খুব সহজ ব্যাপার নয়। অজস্র অনুরাগী থাকে। আপনার স্বামী যদি একটু কম ভাল দেখতে হতেন তা হলে কি ভাল হতো?
কখনই নয়। যদি সুদর্শন না হতো আমি কখনই ওকে বিয়ে করতাম না। 
এই স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে আবার রূপালী পর্দায় ফেরার কোনো চান্স আছে?
না, কখনো নয়। নো নেভার! নো নেভার! এই যে কথাটা বললাম একটা গানের মতো করে শুনতে পারেন।
বলিউডে খানদের সঙ্গে কুমারদের তথাকথিত লড়াই কি আপনাকে প্রভাবিত করে?
তাহলে কি আমির আমার বই উদ্বোধনে আসত?
আপনার নাম টুইঙ্কল কে রেখেছিলেন?
আমার দাদু। ঈশ্বর তাকে দয়া করুন। (কপট রাগে) কিন্তু ওপরে গিয়ে যখন দেখা হবে তখন তাকে কিছু জরুরী কথা বলব।
এর পর কী নিয়ে লিখছেন?
এর পর আমি আর একটা বই লিখছি। এ বইটা প্রথমটার থেকে একেবারেই আলাদা হবে।

About Unknown

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments :

Post a Comment