নুর হোসেনের দুইভাই ও ভাতিজা বাদলকে প্রধান আসামী করে ১৯
জনের বিরুদ্ধে মামলা : গ্রেফতার ২
সিদ্ধিরগঞ্জে সোমবার রাতে আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সাত খুনের মামলার প্রধান আসামী নুর হোসেনের ভাতিজা নাসিক ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলকে প্রধান আসামী করে ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাদল বাহিনীর হামলায় আহত আওয়ামীলীগ নেতা তোফায়েল হোসেনের বোন মেরিনা আক্তার বাদী হয়ে ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরো ১০/১২জনকে আসামী করে মঙ্গলবার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় নুর হোসেনের দুইভাই বিএনপি নেতা নুরুদ্দিন ও নুর সালামকেও আসামী করা হয়েছে। অপর আসামীরা হলো-জুলহাস উদ্দিন লিটন, সহযোগী ৭ খুনের আসামী কালা শাহজাহানের ভাই সন্ত্রাসী অস্ত্রধারী আসলাম, স্বপন, ফয়সাল, সেলিম খান, সাইফুল ইসলাম, বাগমারা মতিউর রহমানের ছেলে মাহফুজুর রহমান বাপ্পী, দেলোয়ার, আকাশ, রুবেল, শান্ত, জাকির, রতন, জসিম উদ্দিন, নবী ও শাহিন। অজ্ঞাত আসামীরা হলো- শেখ ফরিদ, সুরুজ, রিপন, শাহালম, সানারপাড়ের রাজা মিয়ার ছেলে ইয়াছিন, সাবেদ আলীর ছেলে মনির, বাগমারা সিরাজের ছেলে বাবু, বেকারী নুরে আলম, হাত কাটা বুলবুল, মাসুদসহ তার বাহিনীর ১০/১২জন। এরমধ্যে পুলিশ জুলহাস উদ্দিন লিটন ও আকাশকে গ্রেপ্তার করেছে।
মেরিনা আক্তার মামলায় উল্লেখ করেন, সোমবার রাত পৌনে ৮টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা শাকিব তার ভাই আওয়ামীলীগ নেতা তোফায়েল হোসেনের মোবাইলে ফোন করে জানায় ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাদলের লোকজন ছাত্রলীগের দুইকর্মীকে পেটিয়ে আহত করেছে। পরে তোফায়েল ঘটনাটি মোবাইল ফোনে বাদলকে জানায়। বাদল ঘটনাটি মিমাংসার জন্য তোফায়েলকে যেতে বলে। রাত পৌনে ৯টার দিকে তোফায়েল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে কাউন্সিলর বাদলের মুক্তিনগর বটতলার বাড়িতে যায়। সেখানে যাওয়ার পর বাদলের লোকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উপর দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় তোফায়েল বাধা দিলে আসামী বাদলের নির্দেশে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাথারী মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে চাপাতি-রামদা দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়। হামলাকারীরা ছাত্রলীগ নেতা মিশুসহ ছাত্রলীগের আরো ৩ কর্মীকে আহত করে। তারা নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর মারাত্মক আহত তোফায়েলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আশংকাজনক। তার মাথায় ও শরীরের বিভিন্নস্থানে শতাধিক সেলাই দেয়া হয়েছে বলে পরিবারের লোকজন জানান।সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি সরাফত আলী জানান, কাউন্সিলর বাদলসহ ১৯ জনকে আসামী করে আহত তোফায়েলের বোন বাদী হয়ে একটি মামলাটি দায়ের করেন। এরই মধ্যে পুলিশ ২ জন আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যান্য আসামীদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।উল্লেখ্য সোমবার রাতে কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল বাহিনীর সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে আওয়ামীলীগ নেতা তোফায়েল ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এতে তোফায়েলসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। কিন্তু ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য বাদল ও তার লোকজন প্রচার করে তোফায়েলের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা কাউন্সিলর বাদলের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও গুলি বষর্ণের ঘটনা ঘটিয়েছে। চতুর বাদল ঘটনার পর পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়াকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে প্রতিবাদ সভা করে। এদিকে তোফায়েলের উপর হামলার প্রতিবাদে তার সমর্থকরা রাতেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। এবং পরদিন মঙ্গলবার সকালে কাউন্সিলর বাদল ও তার সহযোগিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে।
ওদিকে ঘটনার আসল চিত্র আঁচ করতে পেরে আহত তোফায়েলকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়াসহ আওয়ামীলীগ ও শ্রমিক লীগের নেতৃবৃন্দ। তারা ঘটনার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এদিকে এলাকাবাসী জানায়, সাতখুনের পর আত্মগোপনে চলে যায় কাউন্সিলর বাদল। পরবর্তীতে সাতখুনের চার্জশিট আদালতে গৃহীত হওয়ার আদালতে আত্মসমর্পণ করে বাদল। পরে জামিনে বের হয়ে এসেই সে পুর্বের মত তার অপকর্ম শুরু করে। এতে বাদলকে নিয়ে নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে নাসিক ৩নং ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষের মধ্যে। গত সিটি নির্বাচনে বাদলের প্রতিদ্বন্দি¦ ছিল তোফায়েল। ৭ খুনের ঘটনার পর বাদল ও তার বাহিনী এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর তোফায়েল এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। এসময় এলাকায় তোফায়েলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেলে বাদল এতে শংকিত হয়ে পড়ে। আগামী সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়ে কোন প্রতিদ্ব›িদ্ব না রাখতেই যুবলীগ নেতা তোফায়েলকে নিশ্চিন্ন করতেই বাদল উঠে পড়ে লেগেছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার রাতে বটতলা এলাকায় যাওয়ার পথে বাদলের বাড়ির সামনে পৌছা মাত্র কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই তোফায়েলের উপর হামলা চালায় বাদল বাহিনী।
0 comments :
Post a Comment