হিজাব পরিধান করায় সিদ্ধিরগঞ্জের স্কুল ছাত্রীকে টিসি প্রদান ॥ লেখাপড়া অনিশ্চিত

হিজাব পরিধান করায় সিদ্ধিরগঞ্জের স্কুল  ছাত্রীকে টিসি প্রদান ॥ লেখাপড়া অনিশ্চিত

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি

সিদ্ধিরগঞ্জে নবম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রীকে টিসি দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুধুমাত্র হিজাব পরিধান করায় আঁখি নামের ওই ছাত্রীকে বিদ্যালয় পরিত্যাগের ছাড়পত্র (টিসি) দিয়েছে বলে একাধিক সুত্র জানায়। মূলত বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ডিপেন চন্দ্রের পালিত সন্ত্রাসী মাইগ্যা জাহাঙ্গীরের প্ররোচনায় এ অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে বলে দাবি একাধিক সুত্রের। বছরের মাঝপথে ও নবম শ্রেণিতে রেজিষ্ট্রেশন না করিয়ে টিসি দেয়ায় ওই ছাত্রীর লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মেয়ের লেখাপড়া ও ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে ছাত্রীর অভিভাবক।
জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল এলাকার ভ্যান চালক আওলাদের একমাত্র মেয়ে আঁখি সফুরা খাতুন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। গত ২১ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আঁখির বাবাকে বিদ্যালয়ে ডেকে এনে আখি ও তার বাবা আওলাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক একটি আবেদন পত্রে স্বাক্ষর নিয়ে আঁখির হাতে একটি ছাড়পত্র ধরিয়ে দেয়। এসময় আঁখি ও তার বাবা আওলাদ এর প্রতিবাদ করলে জঙ্গী আখ্যা দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। ঈদের ছুটির পর বিদ্যালয় চালু হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আঁখিকে মূলত হিজাব পরার কারণেই বিদ্যালয় থেকে টিসি দিয়ে দেয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা জানায়, আঁখি অত্র বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণি থেকে লেখাপড়া করে আসছে। সে নিয়মিত হিজাবসহ বোরকা পরিধান করে। গত দুই মাস পূর্বে অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রহিমা বেগম আঁখিকে হিজাব খুলে ফেলতে এবং এরপর থেকে বোরকা ও হিজাব না পরে বিদ্যালয়ে আসার নির্দেশ দেয়। এরপরও আঁখি হিজাব পড়ে বিদ্যালয়ে আসায় তার সাথে খারাপ আচরণ করতে থাকে ওই শিক্ষিকা। এরই ধরাবাহিকতায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর ছাত্রী আঁখির কাছে ইসলামি বই পাওয়া গেছে বলে প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগ দেয় স্কুল শিক্ষিকা রহিমা। এর একদিন পর ২১ সেপ্টেম্বর আঁখির বাবা আওলাদকে বিদ্যালয়ে ডেকে এনে একটি আবেদনে আঁখি ও তার বাবার স্বাক্ষর রেখে বিদ্যালয় পরিত্যাগের ছাড়পত্র (টিসি) দিয়ে তাদেরকে বের করে দেয়। রোববার আঁখি ও তার মা মুকুল এ ঘটনার সাংবাদিকদের জানায়। আঁখি জানায়, স্যারেরা আমাকে আবেদনে কি লেখা রয়েছে তা পড়তে না দিয়ে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে আমাকে টিসি ধরিয়ে দেয়। অপরাধ করে থাকলেও শেষ বারের মত ক্ষমা করে লেখাপড়া করার সুযোগ চেয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। নবম শ্রেণিতে আমার রেজিষ্ট্রেশন না করিয়ে টিসি দেয়ায় আমি অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছি না।  এসময় আঁখির মা মুকুল ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ডিপেন চন্দ্র ও তার পালিত সন্ত্রাসী মাইগ্যা জাহাঙ্গীরের পায়ে ধরে কান্নাকাটি করেও তাদের মন গলাতে পারেনি। একটি সুত্র জানায়, দূর্নীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগে ৩৩ বছর ধরে থাকা শিক্ষিকা হাসিনা বেগমকে জোরপূর্বক বিদায় করার পর ডিপেন চন্দ্রকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। সেই নানা অনিয়ন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তার এসব অনিয়ম জায়েজ করতে স্থানীয় সন্ত্রাসী মাইগ্যা জাহাঙ্গীরকে সাথে নিয়েছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ডিপেন চন্দ্র হিজাব পরার কারণে টিসি দেয়ার অভিযোগসহ সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, অভিভাবকের ইচ্ছায় টিসি দেয়া হয়েছে। বর্তমানে আঁখি অন্য কোন বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে না। নবম শ্রেণিতে রেজিষ্ট্রেশন না করায় এবং বছরের মাঝপথে টিসি দেয়ায় মেয়ের লেখাপড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছে আঁখির অভিভাবক।


About Unknown

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments :

Post a Comment