ভয়াবহ ‘বিশ্বাসহীনতা’ অনেক করছেন , মানুষ কিছুই বিশ্বাস করছে না

গোলাম মোর্তোজা : অল্প কিছু দিনের মধ্যে হত্যাকা- ঘটানো আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা আদালতে জবানবন্দি দিয়ে হত্যাকা- ঘটানোর দায় স্বীকার করেছে। এটা তো পুলিশ বাহিনীর একটা বড় সাফল্য। এমন একটি কাজের পরে তো প্রশংসিত হওয়ার কথা পুলিশ বাহিনীর। কিছুটা হলেও আ¯’া ফিরে আসার কথা। বাস্তবে তা কি হ”েছ? পুলিশ কি প্রশংসিত হ”েছ? হ”েছ না। কেন হ”েছ না?
গণমাধ্যম তার দায়িত্ব পালন করছে না? পুলিশের ভালো কাজ তুলে ধরছে না? হয়তো তুলে ধরছে না বা তুলে ধরতে পারছে না। কাজ করতে গিয়ে পুলিশ যা করছে বা বলছে, তার প্রেক্ষিতে ‘পুরো কাজই’ সন্দেহের মধ্যে পড়ে যা”েছ। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের কিছু করার নেই। পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ কর্তাদের কথা শুনে, কাজ দেখে-বুঝে, জনমানুষের ভেতরে ‘বিশ্বাসহীনতা’ জন্ম নি”েছ। যা ক্ষণ¯’ায়ী নয়, ¯’ায়ী হয়ে যা”েছ।
আপনি অনেক কিছু করছেন, অনেক কিছু বলছেন-মানুষ কিছুই বিশ্বাস করছে না। এমন একটি ভয়াবহ ‘বিশ্বাসহীনতা’র পরিবেশ বাংলাদেশে বিরাজ করছে। এই ‘বিশ্বাসহীনতা’র প্রেক্ষাপট নিয়ে কিছু কথা।

    পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে রাত সাড়ে বারোটা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। যোগাযোগ বি”িছন্ন করে দিয়েছেন। আর মুখে বলছেন, না তেমন কিছু না। গ্রেফতার হওয়া আসামিদের মুখোমুখি করা হয়েছেন। আপনারা যা করেছেন, আর মুখে যা বলছেন- একটির সঙ্গে আরেকটি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। স্বাভাবিক কারণেই মানুষ আপনাদের কথা বিশ্বাস করছে না। বিশ্বাস যে করছে না, বিশ্বাস না করার কারণ যে আপনারা তৈরি করছেন-তাও বুঝতে চাইছেন না। জোর করে যে বিশ্বাস করানো যায় না, তা বুঝতে চাইছেন না।

    মানুষ যা ভাবে, প্রকৃত ঘটনা কখনও কখনও তার সম্পূর্ণ বিপরীত হয়। পৃথিবীতে এমন অনেক নজির আছে। ‘বাবুল আক্তারই তার স্ত্রী মিতুকে হত্যা করিয়েছে’-এমন একটি ধারণা পুলিশই প্রচার করিয়েছে। অবিশ্বাস্য হলেও, অসত্য নাও হতে পারে। এত স্পর্শকাতর একটি বিষয় সেভাবেই তদন্ত হওয়া প্রয়োজন ছিল। প্রয়োজন ছিল অতিরিক্ত সতর্ক থাকার। যা এক্ষেত্রে একেবারে লক্ষ্য করা যায়নি। একজন পুলিশ সুপার কর্মরত থাকা অব¯’ায় ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের শিকার হয়েছেন-এমন নজির তো নেই। এটা তো এত স্বাভাবিক ঘটনা নয়। দেশের সব মানুষ তা বুঝতে পারলেও, পুলিশ কেন তা বুঝতে পারছে না, সেটাই বোধগম্য হ”েছ না।

    মিতু হত্যার আসামিদের মুখোমুখি করার জন্যে, তথ্য যাচাই বাছাই করার জন্যে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এটাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশের বক্তব্য। কোন আসামিদের মুখোমুখি করা হলো বাবুল আক্তারকে? বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে শুক্রবার মাঝরাত থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত। মিতু হত্যায় প্রথম দুজন আসামি ওয়াসিম ও আনোয়ারকে গ্রেফতার করা হয় শনিবার। চট্টগ্রামের পুলিশ সেই তথ্যই জানিয়েছে। তাহলে শুক্রবার রাতে কোন আসামিদের মুখোমুখি করা হলো? তখন পর্যন্ত তো পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করার কথা বলেনি। গ্রেফতারকৃত কোনও আসামিকে ঢাকায় আনা হয়েছে, তাও বলেনি পুলিশ।

সুতরাং বাবুল আক্তারকে গ্রেফতারকৃত আসামিদের মুখোমুখি করার জন্যে ডেকে নেওয়া হয়েছিল, তা একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য কোনও কথা হ”েছ না। পুরো বিষয়টির মধ্যে গভীর কোনও ‘রহস্য’লুকিয়ে আছে বলে মানুষের কাছে প্রতীয়মান হ”েছ।

    স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, দু’একজন ধরা পড়বে। দুজন ধরা পড়ছে। বিষয়টি খুবই ইন্টারেস্টিং। পুলিশ বলছে, সবকিছু জানে আসামি ‘মুছা’। সে বাবুল আক্তারের পুলিশের সোর্স। মুছার পরিকল্পনাতেই এই হত্যাকা- ঘটেছে। মুছাকে পাওয়া গেলেই সব পাওয়া যাবে-এমন একটি ধারণা বাজারে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিš‘ মুছাকে পাওয়া যা”েছ না। পাওয়া কি যাবে?

মনে হয় না। পুলিশের একাধিক সূত্রই জানা”েছ, মুছাকে সপ্তাহখানেক আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। মুছার ক্রসফায়ারের সম্ভাবনা ছিল, এখন সেই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সম্ভবত ‘মুছা’ এখন ‘অদৃশ্য’কোনও নাম। কোনও দিনই হয়তো মুছা আর ‘দৃশ্যমান’হবে না। জানাও যাবে না, মিতু হত্যার পরিকল্পনাকারীর নাম।

    স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গত দু’তিন দিনের কথায়ও তার ইঙ্গিত আছে। বাবুল আক্তার ও পরিবার নিয়ে যে গুঞ্জন চলছিল তার সত্যতা বিষয়ে আগের দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘হতেও পারে।ৃ. প্রকাশ করার সময় আসেনি।’পরের দিন বলেছেন, ‘বাবুল আক্তার নজরদারিতে নেই।ৃ. তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ এখনও আসেনি।’ ‘হয় জেল অথবা পুলিশ বাহিনী থেকে সরে যাওয়া’ পুলিশের পক্ষ থেকে বাবুল আক্তারকে দেওয়া প্রস্তাবের এই প্রসঙ্গটি সর্বত্রই আলোচিত হ”েছ।

বাবুল আক্তার যদি সত্যিই হত্যাকা-ে সম্পৃক্ত থাকেন, সেই প্রমাণ যদি পুলিশের কাছে থাকে-তবে বিচার হবে না কেন? কেন তাকে বাহিনী থেকে সরে যেতে হবে? এমন অবিশ্বাস্য সব কর্মকা- করে, এমন অব¯’া প্রতিষ্ঠিত করে দেয়া হয়েছে যে-

    মূল হত্যাকারী আড়াল করার চেষ্টা হ”েছ।

    বাবুল আক্তারকে পুলিশ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রেক্ষাপট পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হ”েছ।

    পুলিশ যা করছে তার কোনও কিছুই বিশ্বাসযোগ্য নয়।

    অন্য আর দশটি হত্যাকা-ের মতো মিতু হত্যারও প্রকৃত অপরাধী সনাক্ত হবে না, ধরা পড়বে না, বিচার হবে না।

    বাবুল আক্তারের স্ত্রীর চরিত্রহননমূলক কল্পকাহিনী গণমাধ্যম প্রচার করে গর্হিত অপরাধ করেছে। এই গল্প প্রচারে উদ্বুদ্ধ করে পুলিশও কম অপরাধ করেনি। প্রকৃত রহস্য উন্মোচনের চেয়ে, কল্পকাহিনী প্রচার করে, বাবুল আক্তার ও তার পরিবারের নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করার দিকে মনোযোগ বেশি।

    বাবুল আক্তার সৎ না অসৎ সেটা ভিন্ন আলোচনা। বাবুল আক্তার সাহসী-যোগ্য-দক্ষ পুলিশ অফিসার-এটা প্রমাণিত। বাবুল আক্তার বড় কোনও কর্তা বা বড় কোনও গোষ্ঠীর প্রতিপক্ষ হয়ে গিয়েছিল। বড় শক্তির সঙ্গে যুদ্ধ করার পরিণতি ভোগ করতে হ”েছ বাবুল আক্তারকে।

    কোনটি সত্য, কোনটি মিথ্যা, তার চেয়ে বড় বিষয়-মানুষ বিশ্বাস করছে যে সত্য প্রকাশ করা হ”েছ না, প্রকাশ করা হবে না। সাধারণ জনমানুষের কাছে এত অবিশ্বাস এবং আ¯’াহীনতা নিয়ে-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চলতে পারে না।

পুলিশের কর্তাদের বিষয়টি উপলব্ধিতে আসা দরকার। -সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

About Unknown

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments :

Post a Comment