এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যার রহস্য এখন উন্মোচিত হয়নি। তা না হলেও এই ঘটনায় একের পর গ্রেপ্তার হলেও এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট করে পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়নি এই ঘটনার পেছনে কে রয়েছেন? কার নির্দেশে এই খুন হয়েছে, কেই বা খুনীদের ভাড়া করেছেন? পুলিশ মাঝে মাঝে এই মামলার তদন্ত অগ্রগতি হয়েছে বললেও তারা শুরু থেকে এই পর্যন্ত এই হত্যাকান্ডের ব্যাপারে যে ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছেন তার অনেক কিছুই এখন নেই। শুরুতে বলা হয়েছিলো বাবুল জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। তিনি জঙ্গিদের শত্রু। এই কারণে জঙ্গিরাই তার স্ত্রীকে খুন করে থাকতে পারে। আর প্রথম দিকে সেই রকমই সন্দেহ ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও সেই রকমই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিš‘ এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কাউকেই জঙ্গি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়নি বরং ভাড়াটে খুনী হিসাবেই চিহ্নিত করা হয়েছে। এদিকে বাবুলকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা নিয়েও এখনও রহস্য রয়েছে। পুলিশ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, তাকে নিয়ে গিয়ে গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের মুখোমুখি করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের সূত্র ধরেই বের করা সম্ভব প্রকৃত অপরাধীরা কারা? অপরাধী কে এটা জিজ্ঞেস করার জন্য বাবুলকে কেন নিয়ে যেতে হবে? এদিকে বাবুলকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরও এখনও ঘটনার মূল নায়ক ও নির্দেশদাতাকে বের করতে পারেনি পুলিশ। এই কারণে এই খুনের ঘটনা নিয়ে দিনে দিনে রহস্য বাড়ছে। ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলছে বলেও মিতুর বাবা অভিযোগ করেছেন।
এদিকে মিতুর পরিবারের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই মামলার তদন্ত সুষ্ঠুু ভাবে হ”েছ না। এই তদন্ত সুষ্ঠুভাবে হওয়া দরকার। তারা অপেক্ষা করছেন তদন্ত সুষ্ঠু হবে ও প্রকৃত অপরাধীরা ধরা পড়বে সেই জন্য। কিš‘ সেই ব্যাপারে ব্যর্থ হলে মিতুর স্বামী বাবুল ও মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনও মুখ খুলবেন। তাদের কাছে এখন অনেক পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকাই রহস্যজনক মনে হ”েছ।
সূত্র জানায়, এসপি বাবুল দীর্ঘ দিন পুলিশে রয়েছেন তার সাফল্যই সবাই জানে। এই সময়ে তার বিরুদ্ধে স্ত্রী নির্যাতন, যৌতুক দাবি কিংবা পরকীয়া সংক্রান্ত কোন অভিযোগ উঠেনি। এমনকি তার স্ত্রীও কোন দিন তার বাবা মায়ের কাছে বাবুল আক্তারের ব্যাপারে অভিযোগ করেননি। তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়েছে এই রকম কথাও তারা জানেন না। যখন বিভিন্ন দিকে খবর আসছে, তাদের দুই জনের সম্পর্ক ভাল ছিলো না। মনোমালিন্য ছিলো। প্রথমে কথা উঠে মিতুর পরকীয়া ছিলো। পরে আবার কথা উঠে বাবুল আক্তারেরই এক মেয়ের সঙ্গে প্রেম ছিলো। কিš‘ এখন পর্যন্ত তাদের কারো পরকীয় থাকলেও সেই ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। আবার তাদের কারো সঙ্গে প্রেম ছিলো এমনটাও তারা প্রমাণ করতে পারেনি।
সূত্র জানায়, বাবুল যৌতুক চেয়েছিলো এমন অভিযোগও তোলা হয়েছে কিš‘ বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বলেছেন, তার জামাতা নির্লোভ ও সফল পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি কোনদিন তার কাছে কোন যৌতুক চাননি। চাইলেতো সেটা আমার কাছেই চাওয়ার কথা। কিš‘ সেই রকম কোন ঘটনা ঘটেনি। এই অব¯’ায় বাবুলের বিরুদ্ধে যৌতুকের অভিযোগ ও এই কারণে মিতু হত্যায় জড়িত সেই ধরনের অভিযোগ আনার সুযোগ নেই। পরকীয়ার ব্যাপারেও মিতুর বাবা দাবি করেছেন, তাদের কারো পরকীয়া ছিলো না। থাকলে বিষয়টি পারিবারিক পর্যায়ে কিংবা বন্ধুবান্ধবের পর্যায়েও আলোচনা হতো, কেউ না কেউ জানতো। কিš‘ সেই রকম কেউ নেই। তাই এই ধরনের অভিযোগও ধোপে টিকছে না।
জানা গেছে, বাবুল আক্তার যখন পদোন্নতি পান তখন তাকে নেওয়ার জন্য পুলিশ সদর দফতর, ডিএমপি ও সিএমপি সব অফিস থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। যেই বাবুলকে নিয়ে পুলিশের সব অফিসের এত আগ্রহ হঠাৎ এমন কি হলো তার ব্যাপারে এত নেতবিাচক কথা প্রচার করা হ”েছ।
মিতুর হত্যার সঙ্গে বাবুল জড়িত থাকতে পারে এমন সন্দেহও কেউ কেউ করছেন। তবে এই সব সন্দেহ উড়িয়ে দি”েছ মিতুর পরিবার। তারা মনে করছেন, বাবুল যদি এই ধরনের কোন পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে সে বেছে বেছে তার ঘনিষ্ট সোর্সকে কেন ব্যবহার করবে? সন্তানের সামনেই কেন কাজটা করাবে? তাছাড়া এরপরও এতদিন তার মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ প্রকাশ পেত সেই রকম কোন লক্ষণ নেই।
বাবুলের শ্বশুরের আশঙ্কা বাবুলের কারণে যারা সমস্যায় ছিলো, আয় ভাল করতে পারছিল না, বিভিন্ন ধরনের বাঁধা আসছিলো তারা নিজেরা বাচঁতেই এই ধরনের অপপ্রচার চালা”েছন। তিনি মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দিকেও সন্দেহের তীর ছুড়েছেন। যারা নানা কথা বলছেন তাদের ব্যাপারে ও বাড়িতে তদন্ত করার দরকার বলেও মনে করেন। বাবুলের শ্বশুর তার জামাতার সততা ও নির্লোভের কারণে গর্ভ করেন বলেও দাবি করেছেন। তার মতে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাবুল নির্মম ষড়যন্ত্রের শিকার।
এদিকে বাবুলের শ্বশুর এখনও আশাবাদী ঘটনা যেই দিকেই ধাবিত করার চেষ্টা করা হোক না কেন সত্য ঘটনা এক পর্যায়ে বের হয়ে আসবেই। তিনি আশা করছেন দ্রুত এই ঘটনার মূল রহস্য উন্মোচিত হবে। আর সেটা না হলে তিনি মুখ খুলবেন।
বাবুলের ব্যাপারে গণমাধ্যমে যে সব নেতবিাচক কথা আসছে এগুলো তারা বিশ্বাস করছেন না। মনে করছেন, কে কী বলল তাতে কিছুই যায় আসে না। পত্রিকায় কী লেখা হল সেটা নিয়েও মাথাও ঘামা”েছন না। পরি¯ি’তি দেখছেন, আরও কিছু সময় অপেক্ষা করবেন। এরপর মুখ খুলবেন। তারা যখন মুখ খুলবেন তখন সব ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যাবে। তিনি এটাও মনে করছেন, তারা মুখ খুললে কেবল ষড়যন্ত্র শেষ হবে, তাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় কর্মকর্তারও মুখ বন্ধ হবে।
সূত্র জানায়, বাবুল এখনও পর্যন্ত তার শ্বশুর বাড়িতে আছেন। তাকে নিয়ে যখন বিভিন্ন নেতিবাচক খবর প্রকাশ হতে থাকে এই বিষয়টি নিয়ে তার শ্বশর তার সঙ্গে কথা বলেছেন। এরপরও তিনি মনে করেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হতে হবে। এখন যেটা হ”েছ তা সুষ্ঠু তদন্ত নয়। এটা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সহায়ক নয়। তিনি আশঙ্কা করছেন, এখন বিষয়টি এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যে বাবুলকে গ্রেপ্তার করে ক্রসফায়ার দিতে পারলেও তারা খুশি হবে। তাদের জন্য ভালো হবে।
বাবুল-মিতুর পারিবারিক ব্যাপার নিয়ে নানা নেতিবাচক কথা প্রকাশ পেলেও মিতুর বাবা গণমাধ্যম কর্মীদের বলেছেন, তাদের মধ্যে একদিনের জন্যও কোনো ঝগড়া হয়েছে, এমন কোন কথা শুনিনি। এমন সমস্যা থাকলে আমার মেয়ে আমাদের বলতো। বাবুলের বিরুদ্ধে কোন দিন কোন অভিযোগ ছিলো না। এই কারণে এখন এই সব অশান্তির কথা বিশ্বাস করারও সুযোগ নেই।
এমন কথাও বলা হ”েছ মিতুকে বাবুল নির্যাতন করেছিলেন, ওই নির্যাতনের শিকার হয়ে মিতু অন্য এক পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় আশ্রয়ও নিয়েছিলেন। এই কথাও তার বাবা বিশ্বাস করেন না। তিনি মনে করনে, যেই পুলিশ অফিসারের কথা বলা হ”েছ তাকে জিজ্ঞেস করলেইতো হয়ে যায়।
এদিকে সূত্র জানায়, বাবুল পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের পর বাসায় ফিরে আসলেও তেমন কোন কথা বলছেন না। তিনিও অপেক্ষা করছেন। নিজেও ঘটনার পেছনের ঘটনা জানার চেষ্টা করবেন পরি¯ি’তি স্বাভাবিক হলেই। তিনি ও তার শ্বশুর চাইছেন, মামলাটি সঠিক তদন্ত হোক। প্রকৃত অপরাধীদের ধরা হোক। বাবুল ও তার শ্বশুর বিভিন্ন মামলার তদন্ত করেছেন। তাদের অভিজ্ঞতাও এই ব্যাপারে কাজে লাগাবেন।
-
Blogger Comment
-
Facebook Comment
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)

0 comments :
Post a Comment