ঈদে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ককে তীব্র যানজটে জনদূর্ভোগ

মাইনুল সিকদার,কালিয়াকৈর(গাজীপুর) প্রতিনিধি ॥
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কখনও থেমে থেমে কখনও তীব্র যানজটে জনদূর্ভোগ চরম আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে এ সড়কের গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস, কোনাবাড়ী,কালিয়াকৈরের সফিপুর বাজার, পল্লীবিদ্যুৎ, চন্দ্রা,কালিয়াকৈর বাইপাস, কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কের জিরানী এলাকায় প্রায় প্রতিনিয়তই সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় যানজট। যানজট নিরসনে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা নির্বেকার। প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে পড়ে থাকতে হচ্ছে শত শত যানবাহন ও যাত্রীদের। ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরু হলে এর অবস্থা হবে আরো ভয়াবহ বলে যানবাহনের চালকেরা আশংকা করছে ।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ককে এবারের ঈদে যানজট মুক্ত রাখতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। মহাসড়কে থাকা বিভিন্ন স্থানের খানাখন্দক বন্ধ করে জোড়া তালির কাজ ইতোমধ্যে পুরোদমে শুরু করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথের পক্ষ থেকে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই  সড়ক উন্নয়নের কাজ শুরু করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে ঈদে ৪/৫ দিন আগেই মহাসড়ক পুরোপুরি খানাখন্দক মুক্ত থাকবে। 
এছাড়া উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলার ১১৭ টি সংযোগ সড়কের সংযোগ স্থল বলতে গেলে ঢাকার গেটওয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড়কে যানজট মুক্ত রাখতে এবারও প্রতি বছরের নেয় ব্যাপক ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষ্যে চন্দ্রা ত্রিমোড় থেকে বঙ্গবন্ধু আইটি সিটি পর্যন্ত মহাসড়ককে দ্রুত চারলেন সমপরিমাণ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। যাতে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হতে না পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কের (ঢাকা-টাঙ্গাইল) ওপর দিয়ে ১৬টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। পাশাপাশি গাজীপুরের শিল্প এলাকার শত শত যানবাহন ও হাজার হাজার লোক যাতায়াত করেন। কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা হচ্ছে দেশের উত্তরাঞ্চলের ঢাকার সঙ্গে চলাচলের একমাত্র পথ। পণ্য পরিবহন মালামাল আনা-নেয়ার জন্য ওই সড়ক ব্যবহার করা হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটের ফলে মালামাল নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় সংশ্লিষ্টদের। কাঁচামাল নষ্ট হয়ে প্রচুর টাকার লোকসান গুনতে হয় ব্যবসায়ীদের। পাশাপাশি শিল্পকারখানার পণ্যপরিবহন বিলম্ব হওয়ায় কারখানার মালিকরা ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এতে ওইসব প্রতিষ্ঠানকে মোটা অংকের অর্থ লোকসান দিতে হচ্ছে। এমনকি  যানজটে মুমূর্ষূ রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সও  আটকে থাকতে হচ্ছে। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ কলেজ হাসপাতাল, ঢাকায় ও সাভারে পাঠাতে হয়। কিন্তু দেখা গেছে, যানজটের ফলে সময়মতো হাসপাতালে যেতে না পারায় অনেক রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এছাড়া প্রতিদিনের এ যানজটের শিকার হয়ে কারখানার শ্রমিক, চাকুরিজীবিরা সময় মতো কর্মস্থলে যেতে পারেন না। ফলে এসব কারখানার সার্বিক কার্যক্রমের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও সময় মতো ক্লাসে যেতে পারছে না বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ।
ইতোমধ্যে মহাসড়ককে যানজট মুক্ত রাখতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঘোষনা অনুযায়ী এ মহাসড়কের সবকটি ষ্টেশনে কমিউনিটি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যদিও পরিহন চালকরা তাদের কোন কমান্ড মানতে নারাজ। মঙ্গলবার সকাল থেকে মহাসড়কের কোনাবাড়ী, মৌচাক, সফিপুর, চন্দ্রা পল্লীবিদ্যুৎ, হরিণহাটি ও চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় কমিউনিটি পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। দায়িত্ব প্রাপ্তরা লাঠি দিয়ে বারবার যানবাহনের গায়ে আঘাত করতে থাকলেও চালকরা তাদের উপেক্ষা করে মহাসড়কের  উপরে যাত্রী উঠানামা করানোর কারণে ওই সব ষ্টেশনগুলোতে যানজট দেখা গেছে।    
তবু যানজট নিয়ে শঙ্কায় আছেন গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্পকারখানায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকরা।  ঈদের ছুটি শুরু হলে যানজট আরও বাড়বে বলেও আশংকা প্রকাশ করছেন যানবাহনের চালক, যাত্রী ও স্থানীয়রাও।
কারণ ব্যাপক ভাবে কাজ করলেও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে যানজট যে নিত্য দিনের সঙ্গীর মতো পরিণত হয়েছে। এসব স্থানকে যানজট মুক্ত করতে না পারলে ঈদে যানজটের আরও প্রকট হবে। বিশেষ করে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা/ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ত্রিমোড় পর্যন্ত ৭ টি পয়েন্টে যানজট মুক্ত রাখতে না পারলে ঈদে ঘরমুখো মানুষকে রাস্তাতে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে হতে পারে। কারণ এসব পয়েন্টে প্রতিদিনই একই রকম যানজট চোখে পড়ে সকলেরই। এ যানজট যেন সকলের অভ্যাসে পরিনত হয়ে পড়েছে। 
এছাড়াও মহাসড়কের পাশে গাজীপুর মহানগরের কড্ডা,কালিয়াকৈর পৌরসভার হরিণহাটি চন্দ্রা পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় আবর্জনা ফেলার আঘার তৈরি করার কারণেও যানজট সবসময় লেগেই থাকছে। মহাসড়কের উপর আবর্জনা ফেলার বিষয়ে কথা বলতে গেলে কালিয়াকৈর পৌরসভার পক্ষ থেকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে দুষারূপ করা হচ্ছে। কালিয়াকৈর পৌরসভা এলাকায় গাজীপুর সিটি থেকে রাতের আধারে মহাসড়কের পাশে আবর্জনা ফেলে যাওয়া হচ্ছে। এঘটনায় অবশ্য কালিয়াকৈর পৌরসভা এলাকায় আবর্জনা ফেলার গাজীপুর সিটির একজনকে আটক করে সম্প্রতি জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।     
গোড়াই হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর বলেন, চার লেনের কাজ করার ফলে যানজট হচ্ছে। তবে যানজট চন্দ্রা এলাকায় বেশি। তবে যানজট নিরসনে সর্বক্ষণ পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে মঙ্গলবার দেখা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার খাড়াজোড়া, গোয়ালবাথান, সূত্রাপুর এলাকায় এবং নবীনগর-কালিয়াকৈর সড়কের জিরানী এলাকায় জোড়াতালির সংস্কার কাজ করছে সড়ক ও জনপদ বিভাগের লোকজন। যার কারণে ওইসব এলাকায় যানবাহন সড়কের একপাশ দিয়ে চলাচল করছে। ফলে ধীর গতিতে যানবাহন চলাচল করে। গাজীপুরের ভোগড়া থেকে উপজেলার চন্দ্রা পর্যন্ত অর্ধশতাধিক টিকেট কাউন্টার রয়েছে। এসব স্থানে  সড়কের ওপর এলোপাতাড়ি গাড়ি দাঁড় করানো, যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ও মাল ওঠানামা করানো হয়। এতে দুরপাল্লার যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। এছাড়া যানবাহনের চাপ, লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি বিকল হয়ে সড়কের ওপর পড়ছে। বিকল ওইসব যানবাহন সড়ক থেকে সরিয়ে নিতে দেরি হওয়ায় মুহুর্তের মধ্যে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ অসহনীয় যানজট স্বাভাবিক হতে দীর্ঘ সময় লাগে। এছাড়া গাজীপুরের কড্ডা, কালিয়াকৈরের পল্লীবিদ্যুৎ ও চন্দ্রা এলাকায় ময়লা-আর্বজনা ফেলানোর কারণেও এ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। অপর দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেন প্রকল্পের কাজ চলছে। ফলে সড়কের ওই স্থানে এসে চলাচলরত যানবাহনগুলোর গতি কমে যায়। এতে ওই স্থানের দুই পাশে সৃষ্টি হয় গাড়ির দীর্ঘ লাইন। এ মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় থেকে বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি যানজটে প্রতিদিনই ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে অসংখ্য যানবাহন। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা। অনেককে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
সালনা (কোনাবাড়ী) হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু দাউদ মিয়া বলেন, মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড়ের পশ্চিম পাশে চার লেন প্রকল্পের কাজ করার সময় তারা যানবাহন থামিয়ে দেয়ার ফলে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। মাটি এক স্থান থেকে অন্যত্র নিতে বেশ সময় লাগে। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় হঠাৎ বৃষ্টি হলেও সড়কে যানজট লেগে যায়।
চার লেন প্রকল্পের চন্দ্রা থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত সড়কের সাইডের প্রকৌশলী আবদুর রাজ্জাক জানান, সড়ক নির্মাণের কাজের জন্য অল্প সময় যানবাহন থামিয়ে রাখার ফলে এ জট হচ্ছে না। অন্য কোনো কারণে যানজট হচ্ছে।

About Unknown

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments :

Post a Comment