৭০ বছরে পা রাখছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

 ২০১৫ সেপ্টেম্বর ২৮ 
৭০ বছরে পা রাখছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
 ৭০ বছরে পা রাখছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষ্যে সোমবার আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশন উপলক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করে ফুলের তোড়া উপহার দেওয়া হবে।
এ ছাড়াও বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিকাল ৪টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান আর এই নিভৃত পল্লীতেই ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। শেখ লুৎফর রহমান ও সাহেরা খাতুনের অতি আদরের নাতনী হাসু। শৈশব-কৈশোর কেটেছে দাদা-দাদীর কোলে-পিঠে, বাইগার নদীর তীরে, টুঙ্গীপাড়ায়। বাবার দেখা পেতেন কদাচিৎ। পিতা শেখ মুজিবুর রহমান জেল-জুলুম, রাজরোষ ছিল তার নিত্য সহচর। রাজনৈতিক আন্দোলন এবং সংগঠন নিয়েই ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের দিনরাত্রি ও যাপিত জীবন। এ কারণে শেখ হাসিনাসহ অন্য সন্তানেরা বাবাকে কাছে পেয়েছেন খুবই কম। তার পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে অন্যরা হলেন— শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা ও শেখ রাসেল।
শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গীপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হওয়ার পর তার পরিবারকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। তিনি পুরনো ঢাকার মোগলটুলির রজনী বোস লেনে বসবাস শুরু করেন। পরে তিনি যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হন। আবাস স্থানান্তরিত হয় ৩ নম্বর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে। ১৯৫৬ সাল। শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িটির দ্বারোদ্ঘাটন হয়। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার মৃত্যুর পূর্ব দিন পর্যন্ত এই বাড়িতেই অবস্থান করেন।
১৯৬৫ সালে শেখ হাসিনা আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন ঢাকার বকশী বাজারের পূর্বতন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। সে বছরই ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কলেজছাত্রী সংসদের সহ-সভানেত্রী পদে নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় কিশোর বয়স থেকেই তার রাজনীতিতে পদচারণা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ৬ দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু উত্থাপিত ৬ দফা দাবিতে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে এক অভূতপূর্ব জাতীয় জাগরণ সৃষ্টি হয়। শাসকগোষ্ঠী ভীত-সন্তস্ত্র হয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। কারাবন্দী বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয় ১৯৬৮ সালে। বিয়ের কিছুদিন পর শুরু হয় ১১ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি। আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন। জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ডাক আসে দেশমাতৃকার হাল ধরার। সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তার একটানা অকুতোভয় সংগ্রাম। জেল-জুলম, অত্যাচার কোনোকিছুই তাকে তার পথ থেকে টলাতে পারেনি।
১৯৯৬ সালের ১২ জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তার সরকারের আমলেই ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি। সম্পাদিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি। বাংলাদেশ অর্জন করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা। প্রবৃদ্ধি ৬.৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। মুদ্রাস্ফীতি নেমে আসে ১.৫৯ শতাংশে। দারিদ্র্য হ্রাস পায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া সর্বোপরি উন্নয়নের ক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ।
১/১১-এর পর শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত্র। শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য হাজির করা হয় ‘মাইনাস টু’ তত্ত্বের। শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফিরে আসার সময় নিষেধাজ্ঞা জারি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু সাহসিকা শেখ হাসিনা সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করেন; ছুড়ে দেন পাল্টা চ্যালেঞ্জ। বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠে। অবশেষে সরকার পিছু হটে। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ২০০৭ সালের ৭ মে শেখ হাসিনা প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন। কিন্তু এর মাত্র দুই মাস পর ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। জাতীয় সংসদ এলাকায় একটি অস্থায়ী কারাগারে তাকে বন্দী করে রাখা হয়। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় একের পর এক মিথ্যা মামলা। কারাগারে তার জীবননাশের ষড়যন্ত্র চলে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। জীবন-মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে চলতে থাকে গণসংগ্রাম ও আইনি লড়াই। আওয়াজ উঠে শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন নয়। প্রমাদ গুণে শাসক মহল। বদলে যায় দৃশ্যপট। জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অর্জিত হয় ঐতিহাসিক বিজয়। এককভাবে আওয়ামী লীগই লাভ করে তিন-চতুর্থাংশের বেশি আসন। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। গঠিত হয় মহাজোট সরকার।
২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে তিনি তৃতীয় দফা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
এক বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর জীবন শেখ হাসিনার। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তিনি গৃহবন্দী থেকেছেন। সামরিক স্বৈরশাসনামলেও বেশ কয়েকবার তাকে কারানির্যাতন ভোগ ও গৃহবন্দী থাকতে হয়েছে। বার বার তার জীবনের ওপর ঝুঁকি এসেছে। অন্তত ১৯ বার তাকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসে তার লক্ষ্য অর্জনে থেকেছেন অবিচল।
দুপুর ১২টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এবং প্যাগোডা, গির্জাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিভিন্ন এতিমখানাসহ দুস্থদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করবে।

About Unknown

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments :

Post a Comment