ঝিনাইদহে ফের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাস কে কুপিয়ে হত্যা !

ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ:
ফের ঝিনাইদহে মন্দিরের এক সেবায়েতকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত শ্যামানন্দ দাস ওরফে বাবাজি (৫৫) সদর উপজেলার উত্তর কাষ্টসাগরা গ্রামের শ্রী শ্রী রাধামদন গোপাল মঠের সেবায়েত।

শুক্রবার (১ জুলাই) সকাল সাড়ে ৫টার দিকে এ বর্বরতম ঘটনা ঘটেছে। নিহত শ্যামানন্দ দাস বাবাজি নড়াইল সদর উপজেলার মুসুড়িয়া গ্রামের কিরণ দাসের ছেলে।

দেশব্যাপী পুরোহিত, যাজক, ভিক্ষু, শিক্ষক, অধিকারকর্মী, ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় গুরুদের এর আগেও হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বেশ কিছু হত্যাকান্ডের পর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ।
ঝিনাইদহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানিয়েছেন, সেবায়েত শ্যামানন্দ দাস ৩ বছর আগে ঝিনাইদহের উত্তর কাষ্টসাগরা শ্রী শ্রী রাধামদন গোপাল মঠ মন্দিরে আসেন। এরপর থেকে মঠের সেবায়েত হিসেবে কাজ করছিলেন।

প্রতিদিনকার মতো শুক্রবার সকালেও পূজা দেয়ার জন্য মন্দিরের পাশেই তিনি ফুল তুলছিলেন। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে ৩ জন দুর্বৃত্ত এসে তাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়। স্থানীয়রা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গত ৭ জুন একই উপজেলার করাতিপাড়া শ্মশানঘাট এলাকায় পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীকে (৬৫) গলাকেটে হত্যা করেছিল দুর্বৃত্তরা।
ওইদিন সকালের দিকে বাইসাইকেলে করে পুরোহিত আনন্দ গোপাল একটি মন্দিরে পূজা দিতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তিনি নলডাঙ্গা ইউনিয়নের মহিষা ভাগাড় নামক স্থানে পৌঁছালে মোটরসাইকেলে করে আসা তিন দুর্বৃত্ত তার গতি রোধ করে। প্রথমে তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। লাঠির আঘাতে পড়ে গেলে দুর্বৃত্তরা তার গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

পুলিশ জানিয়েছে, পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী হত্যার সঙ্গে সেবায়েত শ্যামানন্দ দাস হত্যার মিল রয়েছে। এর আগে ৫ জুন সকালে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়ায় সুনীল গোমেজ নামে এক খ্রিস্টান দোকানিকে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত সুনীল গোমেজ খ্রিস্টানপল্লির যোসেফ গোমজের ছেলে।
একইদিন (৫ জুন) চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে প্রকাশ্যে হত্যার পর নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর পরই তারা জঙ্গি দমনে বিশেষ অভিযানের ঘোষণা দেয়। ওই অভিযানে দেড় শতাধিক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছিল পুলিশ।

গত ১৫ জুন বিশেষ অভিযানের মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামি স্টেটের (আইএস) নামে চিঠি পাঠিয়ে রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনের এক গুরুকে ধর্মপ্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চাপাতিতে কুপিয়ে হত্যার হুমকি দেয়।
চিঠিতে ওই ধর্মগুরুর উদ্দেশে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ একটি ইসলামী রাষ্ট্র, এখানে ধর্মপ্রচার করতে পারবি না। ধর্মপ্রচার করা হলে ২০ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে তোকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হবে।’ তবে কোন মাসের ২০ থেকে ৩০ তারিখ সে বিষয়ে চিঠিতে কিছু উল্লেখ ছিল না।
সম্প্রতি দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে হিন্দু পুরোহিত হত্যাকান্ডের পর আইএস কিংবা আল কায়দা দায় স্বীকার করলেও জঙ্গি দল দুটির অস্তিত্ব বাংলাদেশে নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে।

About Unknown

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments :

Post a Comment